চিকিৎসকেরা বলছেন করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই
করোনার তৃতীয় ঢেউ কি আসছে? কতটা ভয়ঙ্কর হবে এই ধাক্কা? করোনার এতরকম নতুন প্রজাতি ছড়িয়ে পড়েছে যে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক চরমে উঠেছে। কোভিডের ‘থার্ড ওয়েভ’ এখন চর্চার কেন্দ্রে। কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন, কীভাবে আগলে রাখবেন সন্তানদের, কী কী নিয়ম মানতে হবে এইসব নিয়েই সাধারণ মানুষের সবরকম প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন নামী চিকিৎসকরা।
করোনার তৃতীয় ঢেউ কি আসবে?
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডাঃ উচ্ছ্বল কুমার ভদ্র বললেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে দ্বিমত আছে। ভাইরাস যখন খুব বেশি বদলাতে শুরু করে অর্থাৎ জিনগত বিন্যাসের পরিবর্তন হতে থাকে, তখনই এই ধাক্কাগুলো পর পর আসে। কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউও এইভাবেই এসেছে। এখন তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। ডাক্তারবাবু বললেন, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ যদি আসেও তাহলেও তা খুব বেশি মারাত্মক হবে না। কারণটা কী? ডাক্তারবাবুর মতে, ভাইরাসের যে বদলগুলো হচ্ছে তা কিন্তু খুব একটা সাঙ্ঘাতিক পর্যায়ে হচ্ছে না। এই যে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট থেকে ডেল্টা প্লাস এল, এর মধ্যে বদলটা সামান্যই হয়েছে। তাই যে নতুন ভাইরাস তৈরি হয়েছে তা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে তেমনটা নাও হতে পারে। আরও একটা কারণ হল, দেশে প্রথম যখন সার্স-কভ-২ মহামারী দেখা দিয়েছিল তখন মানুষ তার প্রতিরোধের উপায় জানত না। ভ্যাকসিনও তৈরি হয়নি তখন। কিন্তু এখন নানারকম ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেছে। সংক্রমণ সারানোর চিকিৎসাপদ্ধতিও আছে। মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আগের থেকে বেড়েছে। ভ্যাকসিন নিয়েছেন যাঁরা তাঁদের শরীরে ইমিউনিটিও বেড়েছে। তাই তৃতীয় ঢেউ এলেও তা খুব বেশি প্রাণঘাতী হবে বলা যায় না।
‘তৃতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর হলে বুঝতে হবে কৃত্রিম উপায় মিউটেশন করানো হয়েছে’
ডাঃ উচ্ছ্বল কুমার ভদ্রই বললেন, ভাইরাসের মিউটেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে। আসলে করোনাভাইরাস নতুন নয়, আগেও ছিল। সর্দি-কাশির মতো রোগ হত এই ভাইরাসের কয়েকটি প্রজাতির সংক্রমণে। এখন যে সার্স-কভ-২ ছড়িয়েছে বিশ্বে তাতে মিউটেশন বা জিনগত বদলটা ঘন ঘন হচ্ছে। সেই কারণেই ভাইরাসের এত নতুন প্রজাতি আসছে, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ঢেউ আসার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। বিশ্বের কিছু দেশ কিন্তু এখনই কোভিডের কয়েকটা ঢেউ পার করে ফেলেছে। ডাক্তারবাবুর মতে, প্রতিটা ঢেউয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা কমতে থাকে। দুর্বল হতে থাকে ভাইরাল স্ট্রেন। তাই ডেল্টা প্লাস ভাইরাসের মিউটেশন হলেও সেটা লাগামছাড়া হবে না বলেই আশা করা যায়। যদি কোনওভাবে এই তৃতীয় ঢেউ মারাত্মক বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে, মৃত্যুহার ভয়ানকভাবে বাড়ে, এবং সেটা নতুন ভাইরাস প্রজাতির কারণেই হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এই ভাইরাল স্ট্রেন প্রাকৃতিকভাবে আসেনি। সহজ করে বললে, নতুন প্রজাতিতে যে বদলটা হয়েছে তা প্রাকৃতিক নিয়মে হয়নি, বরং কৃত্রিম উপায় করানো হয়েছে। তবে এই আশঙ্কা এখনও অমূলক। যতক্ষণ না তৃতীয় ঢেউ আসছে এবং তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে, ততক্ষণ কিছুই বলা সম্ভব নয়।
এই চার কারণেই আসবে তৃতীয় ঢেউ
মহামারীর সময় এই ওয়েভগুলো কেন আসে? আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (কমিউনিটি মেডিসিন) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুই বললেন, যখন কোনও মহামারী ছড়িয়ে পড়ে তখন একের পর এক এমন ওয়েভ আসতেই থাকে। এটা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের ওপরে—এক, ভাইরাস কতটা সংক্রামক এবং কত দ্রুত মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, দুই, মানুষের ব্যবহার, অর্থাৎ ভাইরাস ঠেকাতে মানুষ কতটা সতর্ক, তিন, ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন এবং চার, ভাইরাসের মিউটেশন বা জিনগত বদল। ডাক্তারবাবু বললেন, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আসবেই। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই আসার সম্ভাবনা প্রবল। তবে এই থার্ড ওয়েভ খুব একটা প্রাণঘাতী হবে বলে এখনই কোনও তথ্য মেলেনি। যদি না গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ বহু মানুষের ভিড়, মেলামেশা থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। ডাক্তারবাবু বলছেন, চাইলে এই তৃতীয় ঢেউকে রুখে দেওয়া সম্ভব।
কীভাবে ঠেকানো যাবে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ?
ডাঃ অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, মানুষের ব্যবহার এবং আচরণবিধিই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়াস্ট কতটা রোগ ছড়াবে তার থেকেও বড় কথা হল মানুষ যদি কোভিড বিধি ভেঙে মেলামেশা বাড়িয়ে দেয়, ভিড়-জমায়েত করে তাহলে সংক্রমণ সাঙ্ঘাতিক আকার নেবে। তাই সবচেয়ে আগে দরকার সতর্কতা ও সচেতনতা। তার জন্য মাস্ক, পারস্পরিক দূরত্ব, হাত স্যানিটাইজ করা, পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা এগুলো জরুরি। সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেই পরীক্ষা করে নেওয়া, নিজেকে আইসোলেশনে রাখা এগুলো দরকারি। বাড়িতে ছোট বাচ্চা আচে যাঁদের সেই বাবা-মায়েদের সতর্ক থাকতে হবে। ভ্যাকসিন নিয়ে রাখতে হবে, বাইরে থেকে এলে হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজ করা, এগুলো সাধারণ বিধি যা মেনে চলতেই হবে।
করোনার থার্ড ওয়েভ সেকেন্ডের মতো এতটা প্রাণঘাতী নাও হতে পারে। এখনও অবধি যতটা সূত্র মিলেছে তাতে জানা যাচ্ছে, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে রূপ বদলালেও তা খুব বেশি খারাপ প্রভাব ফেলবে না। ডাক্তারবাবুর বক্তব্য, কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ যে জায়গুলোতে হয়নি সেখানে তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা প্রবল। কেন? কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো তৃতীয় ঢেউ দেশজুড়ে একই সময় সবজায়গায় আছড়ে পড়বে না। বরং যে জায়গাগুলোতে সংক্রমণের হার কম ছিল, সেখানেই তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সেইসব এলাকা, সে গ্রাম হোক বা শহর, বেশি মানুষের মধ্যে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি, যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল। সুতরাং হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।
কেউ বলছে বাচ্চাদের ভয় বেশি, কেউ বলছে ভয় নেই, কোনটা ঠিক ডাক্তারবাবু?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (সিনিয়র পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্ট) ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী বললেন, তৃতীয় ঢেউ বিশাল কিছু একটা হবে তার কোনও বৈজ্ঞানীক ভিত্তি নেই। এতটাও আতঙ্কের কারণ নেই। সব জায়গায় সমানভাবে হবে না। দ্বিতীয় ঢেউয়ের গতি যে জায়গাগুলোতে কম ছিল সেখানেই থার্ড ওয়েব আসার সম্ভাবনা বেশি। বাচ্চাদের নিয়ে যে টা শোনা যাচ্ছে সেটা একেবারেই ঠিক নয়। বলা হচ্ছে প্রথম ঢেউয়ে বয়স্করা আক্রান্ত হয়েছিল, দ্বিতীয় ঢেউয়ে কম বয়সীরা এবং তৃতীয় ঢেউ এলে বাচ্চারা নাকি বেশি সংক্রমিত হবে। ডাক্তারবাবু বলছেন, এটা একেবারেই ভ্রান্ত প্রচার। কারণ শতকরা হিসেবে দেখলে, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউতে বাচ্চারা আট বা সাড়ে আট শতাংশের বেশি আক্রান্ত হয়নি। তাই বয়সের হিসেবে শতকরা হিসেবটা খুব বেশি সাঙ্ঘাতিক নয়।
আরও একটা কারণ হল, বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। ছোট থেকেই বাচ্চাদের নানারকম টিকা দেওয়া হয়। তাই ইমিউনিটি বেশিই থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে নানা দেশেই সংক্রমণের হার খতিয়ে দেখতে সেরো সার্ভে করা হয়েছে। আমাদের দেশেও হয়েছে। শহর, গ্রাম, প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সেরো সার্ভে করে দেখা গেছে বাচ্চাদের প্রায় ৫৫-৫৬ শতাংশের শরীরেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এর মানে হল, বাচ্চাদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে এবং রোগ তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। যেহেতু রোগ মারাত্মক আকার নেয়নি এবং বেশিরভাগই উপসর্গহীন বা অ্যাসিম্পটোমেটিক ছিল তাই বোঝা যায়নি। অর্থাৎ এখান থেকেই স্পষ্ট, বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণজনিত জটিল রোগ ছড়াবার ভয় তেমন নেই। প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা একেবারেই নেই। ভ্যাকসিন না নিয়েও যদি ৫৬ শতাংশ বাচ্চার শরীরে অ্যান্টিবডি থাকে তাহলে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে রোগ প্রতিরোধ অনেকটাই বাড়বে। তৃতীয় ঢেউ এলেও ভয়ের কারণ থাকবে না।
চিন্তা কি একেবারেই নেই?
ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, যে বাচ্চাদের কোমর্বিডিটি আছে বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা আছে তাদের সাবধান থাকতে হবে। তার জন্য অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল পরীক্ষা করা দরকার। জন্মের পর থেকে ২ মাস অবধি বয়সের শিশুর যদি মিনিটে শ্বাসের হার ৬০ বা তার বেশি হয় তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, ২ মাস থেকে ২ বছর অবধি শিশুদের মিনিটে শ্বাসের হার ৫০ বা তার বেশি হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, ১ বছর থেকে ৫ বছরের মধ্যে বাচ্চার মিনিটে শ্বাসের হার ৪০ বা তার বেশি হলে সতর্ক হতে হবে, আর ৫ বছরের ওপরে শিশুদের মিনিটে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার ৩০ বা তার বেশি হলে তখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আর যদি দেখা যায়, বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়েছে, খিঁচুনি হচ্ছে, শ্বাস নেওয়ার সময় পাঁজরের অংশটা ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে, গোঙানির আওয়াজ হচ্ছে তখন বাবা-মায়েদের সতর্ক হতে হবে। তাছাড়া পেট খারাপ হলে ওআরএস ও জ্বর হলে প্যারাসিটামল—আর কোনওরকম ওষুধ দেওয়ার দরকার নেই। উপসর্গ বুঝলে ডাক্তারের কাছে যান, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড একেবারেই খাওয়াবেন না।
বাচ্চাদের জন্য বাবা-মায়ের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে বললেন ডাঃ অনির্বাণ দলুই। তিনি জানালেন, স্কুল খোলার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। তাই স্কুলগুলিতে যদি দুটো করে সেশন করা যায় সকালে ও বিকেলে তাহলে ভাল। একবারে অনেক বাচ্চাকে না বসিয়ে দুটো সেশন করে ক্লাস নিলে ভাল হয়। বাবা-মায়েদের ভ্যাকসিন নিয়ে রাখতে হবে অবশ্যই। আর মাস্ক, স্যানিটাইজেশনের দিকে নজর দিতে হবে। কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন, স্পুটনিক ভি যে ভ্যাকসিনই হাতের কাছে পাওয়া যাবে নিয়ে নিন। ভ্যাকসিন ভাইরাসের যে কোনও প্রজাতি থেকে সুরক্ষা দেবে।
‘তৃতীয় ঢেউ কেমন হবে তো জানি না, তোমরা সকলে সাবধান থেকো’
ডেল্টা প্লাস কতটা ভয়ঙ্কর হবে, তৃতীয় ঢেউ কতটা সংক্রামক হবে তা তো জানি না, কিন্তু সাবধান থাকতেই হবে, ঠিক মায়ের মতোই বোঝালেন আইসিএমআর-নাইসেডের প্রাক্তন বিজ্ঞানী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপিকা সুর। তিনি বললেন, করোনা কমছে মানেই হাত ধোব না, মাস্ক পরব না, ভিড়ের মধ্যে যাব, যা ইচ্ছা করব, তেমন মনোভাবে রাখলে চলবে না। ভ্যাকসিন তো নিতেই হবে, সেই সঙ্গে মাস্ক, পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। বাইরে থেকে এলে জামাকাপড় ধুয়ে ফেলতে হবে, পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ছোট বাচ্চা থাকলে বাবা-মায়েরা সতর্ক থাকুন। কারণ বাচ্চাদের মধ্যে রোগ ছড়ালে সেটা বাইরে থেকেই আসবে। ডাঃ দীপিকার মতে, এখন স্কুল না খোলাই ভাল। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো বাইরে গেলে যদি সংক্রমণ ধরে যায়, তাই এখন বাড়িতে থাকাই বেশি সুরক্ষিত। নিয়মের মধ্যে থাকা, ভাল পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, হাল্কা ব্যায়াম এগুলো জরুরি। কোভিডের বিধি মেনে চলুন সবাই, বলছেন ডাঃ দীপিকা। সতর্কতাই এখন একমাত্র অস্ত্র, সার্বিক স্তরে সচেতনতা দরকার। তাহলেই কোভিডের যে কোনও ওয়েভের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পাওয়া যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন